Saturday, April 29

কেমন বিকশিত হচ্ছে আমাদের শিশুরা

 


ছোটোবেলায় ঠাকুরমার মুখে কিংবা বাড়ির বয়োজ্যেষ্ঠ মানুষদের মুখে অনেকেই ঈশপের ব্যাঙ আর একদল শিশুর গল্প শুনেছেন নিশ্চয়ই! আমার ও সোভাগ্য হয়েছিলো শুনার,ছোটোবেলায় আমরা এ ছাড়াও অনেক অনেক মজার গল্প শুনেছি-বিনিময়ে গল্প কথকের সমস্ত চাহিদা মিঠিয়ে দেবার প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থেকেছি।এবার গল্পে আসি -যেখানে শিশুরা মজার জন্যে ঢিল ছুঁড়তো আর ব্যাঙ আঘাত পেতো ঢিলে, এ ছিলো একদলের আনন্দ আর অন্যদলের বেদনার কারন। শিশুদের ঢিল যতো জোড়ে আঘাত করতো নিরীহ ব্যাঙকে,ব্যাঙ গুলো সমানভাবে চেচিয়ে উঠতো ব্যাথায়, ঠিক একি সমানে শিশুগুলো ততো আনন্দে নেচে উঠতো।এটা তাদের অজ্ঞাত মনের খেলা ছিলো। আজ হয়তো এসব গল্প আমাদের শিশুরা শুনতে পারেনা,গল্পগুলো ও বিলীন হওয়ার শেষ পর্যায়ে।তাছাড়া গল্প বলতেই যেনো শিশুদের খারাপ লাগা মনে হয়,তারা এখন মোবাইল ফোন হাতে পাওয়াকে সমস্ত শান্তি অর্জন মনে করে।আর তাই মোবাইল ফোনের ভিডিও গেমস কেড়ে নিয়েছে তাদের গল্পের ভাঁজে সত্য আর মানবিক হওয়ার চেতনা।এবার মূলে আসি-কিছুদিন পূর্বে যথারিতী বিকেলে টিউশনীর উদ্দেশ্যে যাওয়ার পথে দেখলাম আমাদেরি নতুন প্রজন্ম নতুন শিশু-কিশোরদের এক নতুন সম্পূর্ন ভিন্ন এক তাদের মতে খেলা নামক খেলা খেলতে দেখলাম,ঘটনার শুরতেই দেখলাম প্রথমত তারা সেখানকার কয়েকটি ছোটো ছোটো কুকুরের বাচ্চা নিলো,ওগুলোকে শক্ত করে বেঁধে রাখা হলো পাশ্ববর্তী গাছের সাথে,ওদের প্রত্যেকের হাতেই সিরিঞ্জ ছিলো। তারপর প্রত্যেকেই ইনজেকশনের সুইয়ের মাধ্যমে কুকুরছানাগুলোর শরীর থেকে রক্ত বের করছে আর ব্যাথায় কুকুরছানা গুলো গোঙাচ্ছে। তারপর তারা তাদের পরিকল্পনাবসত খেলা শুরু করলো-একে অপরের গায়ে রক্ত ছিঁটিয়ে আনন্দে মেতে উঠলো। কাছে গিয়ে যেইনা জিজ্ঞাসা করা হলো,প্রত্যেকেই সহাস্যে বলে উঠলো আমরা রক্ত রক্ত খেলছি ! রক্ত রক্ত খেলা-মানে বুঝুন,একটু ভাবুন তারা কি খেলছে আর কেনোই বা তারা এমন অমানুষিকতাকে খেলা বলে গ্রহন করলো? তাদের পরিবার! তাদের সমাজ! তাদের অভিভাবক কিংবা তাদের প্রতিবেশী-উনাদের প্রতি একটু নজর দিন,তারা তবে কেমন শিশু-কিশোর তৈরী করছে! আমরাওতো একদিন শিশু কিশোর ছিলাম তারা আজ শিশু কিশোর।প্রজন্ম কি এতো সহজেই পরিবর্তিত হয়ে গেলো! তবে এ আবার কেমন প্রজন্ম তৈরী হচ্ছে যারা নাকি এতটা ভয়ংকর কার্যকে খেলা বলে মনে করছে! প্রসঙ্গত না বললেই নয়,আমাদের গ্রামের বাড়িতে একটা কুকুর ছিলো,স্বাভাবিকতায় প্রত্যেক কুকুরই প্রভুভক্ত আমাদের কুকুরটার ক্ষেত্রেও তাই তবে তার পরিমাণ অনেক বেশীই ছিলো।তখন আমরা ছোটো ছিলাম,কুকুরটাকে যত্ন নিতাম আর কোথাও যদি যেতাম কুকুরটা সাথে যেতো। তারপর কুকুরটি যখন মরে গেলো,বাড়ির সবাইর মনে কেমন একটা বেদনাবোধ তৈরী হলো আর নিজ পরিবারের সদস্যের ন্যায় তাকে মাটিচাপা দেওয়া হলো।এই শিক্ষাস্বরুপ,তারপর গ্রামে গ্রামে ঘুরতাম কুকুরের বাচ্চা আনার জন্যে,এনে যত্নে খাওয়াতাম,নিয়মিত স্নান করিয়ে দিতাম আর শীতের রাতে থাকার জন্য খড়ের ঘর তৈরী করে দিতাম।এই ছিলো আমাদের তখনকার পারিবারিক /সামাজিক শিক্ষা যা আমাদের অবলা পশুর প্রতি ও দায়িত্ব কিংবা ভালোবাসতে শিখিয়েছে। কিন্ত যাদের নিয়ে বলছি তারাও শিশু তবে শিক্ষা/সমাজ /পরিবারের ধরনটা আলাদা। বরাবরের মতো আমি ওদের (নিষ্পাপ শিশুদের)দায় দিচ্ছিনা,ওরাতো শিখে যা আমরা বড়রা করি,যা সমাজ সমর্থন করে যা পরিবারে সংগঠিত হয় নিত্য। তবে আপনি কাকে দায় দিবেন! দায় দিতে হবেনা আর,ভাবুন,কাজে নামুন -শিশুদের মানষিকতার প্রতি নজর দিন,সমাজটাকে সদ্য কথা বলতে পারা শিশুর মতো নিষ্পাপ, ভালোবাসাময় গড়ে তুলুন। ওরাই একদিন পরিচালনা করবে সমাজ,রাষ্ট্র। নির্ধারন করবে আমাদের বলা না বলা,করা না করা তখন ওদের দায় দিয়ে বাঁচতে পারবেন না তাই সময় আজো আছে-ওদের সুষ্ঠ বিকাশে নজর দিন,ভালোবাসতে শেখান,মানবিক হতে শেখান। সুবাস সরকার লেখক ও শিক্ষক গাজীপুর ।

No comments:

Post a Comment