Monday, May 22

চিকিৎসা সেবা নাকি বাণিজ্য।


মানুষের প্রত্যাহিক জীবনে সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্যে চিকিৎসা গ্রহন অতীব প্রয়োজন।বিজ্ঞানের উন্নতিসাধনের সাথে তাল মিলিয়ে পরিবর্তিত হচ্ছে চিকিৎসা পদ্ধতি তা হয়ে গেছে আরো সহজলভ্য,মানুষের খুব নিকটে পৌঁছেছে এর প্রভাব, আর তাই বহুদিনের কুসংস্কার ভুলে গিয়ে মানুষজন যে কোনো জটিল শারীরিক/মানসিক সমস্যার সমাধানে চিকিৎসকের শরনাপন্ন হন। এভাবেই আরোগ্য পেতে পেতে সে চিকিৎসকদের প্রতি মানুষের আস্থাশীলতা খুব রকম বেড়েছে।একজন রোগাক্রান্ত ব্যাক্তিকে বেঁচে থাকার আশা এবং বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা তা চিকিৎসকদের উপর বর্তায় কিন্তু আজ আমাদের দেখতে হয় এক ভিন্নমুখী আশাহীনতা সে চিকিৎসকদের প্রতিই। যাদের প্রতি আমরা আমাদের সর্বোচ্চ'র বিনিময়েও আস্থাভাজন থাকি আর তারাই বা কতটুকু আমাদের প্রতি দায়িত্বশীল বর্তমানকালীন প্রসঙ্গত তা পুরোতেই ভিন্ন।যদি আমরা এমতাবস্থায় চিকিৎসক আর চিকিৎসা সেবা নিয়ে একটু অনুসন্ধানী দৃষ্টি দিয়ে তাকাই তবে এক নিধারুন সত্যের মুখোমুখি হতে হয়।প্রসঙ্গক্রমে,
নচিকেতার গানটা প্রায়ই শোনা হয়-ও ডাক্তার, তুমি কতশত পাস করে এসেছ বিলেত ঘুরে মানুষের যন্ত্রণা ভোগাতে! কি অদ্ভুতুড়ে মনে হয় যখন সুস্থ মস্তিষ্কে গানটা ভাবতে যাই,একজন ডাক্তার যিনি বিলেত হতে অনেক বড় বড় ডিগ্রী নিয়ে আসবেন চিকিৎসায় সেবায় উন্নতিসাধনের জন্যে,রাষ্ট্রের সাধারন জনগনদের জন্য উন্নত চিকিৎসা সেবা দিতে, রাষ্ট্রে বসবাসরত সাধারন নাগরিক কঠিন ব্যাধি থেকে মুক্তি পাবেন নিমিষেই,অথচ একজন শিল্পীমনা লোক যিনি বলছেন নাকি তিনি মানুষের যন্ত্রণা ভোগাতে বিলেতী ডিগ্রী নিয়ে আসেন,ভোলাতে নয়!প্রথমত মনে হতো গানটার মধ্য দিয়ে অসম্মানিত করা হয় মানুষের সবথেকে বিশ্বাসযোগ্য পেশাটিকে,যারা নাকি মানুষদের সেবা দিয়ে জীবন ফিরিয়ে দিতে পারেন অতিবেশী অসুস্থতা থেকেও।আর এমনি এক পেশাধারীকে নিয়ে এমন গান তৈরী করা সম্পুর্ন অন্যায় আর মিথ্যাচার মনে করতাম।আবার ভাবনা হত শিল্প,সাহিত্য,সংস্কৃতি তাতো রাষ্ট্রের সময়কার অবস্থান নির্নয় করে তবে কি শিল্পীর ধারনাটাই সত্যি নয় নাকি! এই দুয়ে ব্যাপক সংশয় ছিলো,যদিও পর তা স্পষ্টত হয়। আজ আমাদের মস্তিষ্ক যখন সত্যিই অসুস্থ হয়ে পরেছে,এই অসুস্থতার গন্ডি পেরিয়ে যখন কোনোক্রমেই মুক্ত হতে পারছি না,চারদিকে শত বাধা,বিপত্তিকে সাথে বহেই চালিত করতে হয় জীবন তাই আজকের এই সমাজ ব্যাবস্থার প্রতিটা পদে পদে গানটা যে চরম সত্য তাই প্রতিনিয়ত প্রতিফলিত হয়।বস্তুত তাই হয় যে ডাক্তারের নামের পাশে এ টু যেড এর সবথেকে বেশী অক্ষর অপব্যায় হবে সেই ব্যাক্তিই হবে মানুষ হত্যার মহান কারিগর হওয়ার দৌড়ের তালিকায় সবথেকে সুযোগ্য ব্যাক্তি!আর এই অক্ষর অর্জনের মধ্য দিয়েই তারা তাদের ব্যাক্তিত্ব লড়াইয়ে নামে যার শেষ বলতে কিছু নেই,যাচ্ছেতাই রকম বেহায়াপনা করে চিকিৎসার নামে নিজেদের আখেড় গোছানো। যার নামের পাশে যত বেশী অক্ষরযুক্ত বর্তমান চিকিৎসার বাজারে তার মূল্য ততো বেশী আর কদর ও বেশী। তার এই বেশী অক্ষর সংগ্রহ করতেও তাকে বেশী টাকা ব্যায় করতে হয় কেননা শৈশব থেকেই চলমান রাষ্ট্র ব্যাবস্থা ব্যাক্তিকেন্দ্রিক আর স্বার্থপরতা শিখিয়ে রাখে সেহেতু সে তার নিজের ব্যাক্তিস্বার্থ অর্জনে প্রথম জীবনে চিকিৎসাবিদ্যা শেখার মধ্যে বিনিয়োগ করে পরে তা থেকে মূনাফামুখী হয়।এই প্রক্রিয়ার পিছনে ধাবিত হতে গিয়ে প্রথমত তার লক্ষ্য অর্জনে ব্যাপক খরচ করে তৈরী হতে হয় আর তৈরী হওয়ারপর ভাবনায় থাকে তারি খরচকৃত টাকা মূনাফাসহ অর্জন করার।এই স্বার্থপরতার বিপরীত ক্রিয়া ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলে সমাজে বসবাসরত বাকি চিকিৎসা সেবা নিতে যাওয়া নাগরিকদের জীবনে।চিকিৎসার নামে সেখানে বেচাকেনা হয়, বিরাটমূল্যের রমরমা বানিজ্য চলে।বানিজ্যে বরাবরের মতোন একপক্ষই লাভবান হয় আর অপরপক্ষ নিত্য শোষিত হয়ে আসে।একজন বাঁচতে গিয়ে চিকিৎসকের সরনাপন্ন হয়ে সব হারিয়ে নিঃশ্ব হয় আর আরেকজন জনগনের টাকা পকেটে নিয়ে আয়েশী ভঙগিমায় জীবন যাপন করে।
তেমনি কিছু চিত্র তুলে ধরা যেখানে উচ্চতর ডিগ্রী সমান সমান রোগীদের ভোগান্তি, যেমনঃকিছুদিন আগে শুনলাম চিকিৎসার নামে এক ন্যাক্কারজনক বেহায়াপনা, প্রসববেদনা বেড়ে যাওয়ায় সন্তানসম্ভবা মাকে নার্সিং হলে নিয়ে আসা হলো,পরিস্থিতি জননীর পক্ষেই ছিলো তার মানে কিছুসময়মাত্র অপেক্ষা,বাচ্চা প্রসব হবে আর তা স্বাভাবিকভাবে। নার্স দেখলেন,ফোনে কথা বললেন দায়িত্বে থাকা সিজারিয়ান ডাক্তারের সাথে,হুকুম এলো খুব দ্রুত ইনজেকশন দেবার যেনো স্বাভাবিক গর্ভপাত না হতে পারে,দশ মিনিটের মধ্যেই সিজারিয়ান ডাক্তার ছুটে এলেন কিন্তু দৃশ্যপট বদলে গেলো-বাচ্চা প্রসব হয়ে গেলো।এই দেখে ডাক্তার রেগে নার্সদের ধমকাতে লাগলেন।কেননা সিজারিয়ান ডাক্তারের উপর নির্ভর করে নার্সিংহোমের মালিকের লাভের পরিমান আর প্রচারমুখী বাজারের ঔষুধ ব্যাবসায়ী প্রতিষ্ঠান।নার্সিংহোম তৈরীর পর সেখানকার ডাক্তার দের কিনে নেয় ঔষুধ কোম্পানি যদি সিজার করা যেতো তবে সব দিকেই লাভবান হওয়া যেতো কিন্তু তা আর হতে পারলো না। হাঁ,এই হলো আমাদের বর্তমান স্বাস্থ্যসেবা তবে স্বাস্থ্যসেবা নয় মোটেও পুরোতে স্বাস্থ্যসেবার নামে বানিজ্য। আর বানিজ্য ই বা হবে না কেনো ? বানিজ্যিক মেডিক্যাল কলেজ হতে ডাক্তারি পড়াশুনা সম্পূর্ন করতে তার যে লাখ লাখ টাকা খরচা হলো,কোন কোন ক্ষেত্রে তাদের ঢালতে হয় বিশাল টাকা,আবার কাউকেতো জমানো সম্পদ বিক্রি করে পড়াশুনা শেষ করতে হয়,তারি ফলশ্রুতিতে তার আগে তো সে টাকা উঠানো চাই পরবর্তীতে লাভাংশ, এভাবেই না হয় একসময় স্বাস্থ্যসেবা হবে কিন্তু পূঁজিবাদের সমাজে একবার যখন পূঁজির সাধ পেয়ে যায় তবে সবাইকে পিছে ফেলে বড় হওয়ার তাগিদে তা সে চিরন্তন ধারায় মেনে নিয়ে চালিত হয় তার মানে যাকে আমরা স্বাস্থ্যসেবা বলবো তা হয়ে যায় বানিজ্যের তাগিদে সেবা। ফল এমনি,সে সেবা দিবো,তবে যে প্রক্রিয়ায় মূনাফা বেশী, আর এই বিশ্বাসের কবলে বলি হচ্ছি আমরা আর আমাদের প্রসববেদনায় ভোগায় সন্তানসম্ভবা জননীরা।রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা পর্যায়ে যখন ডাক্তারদের সরকারীকরন করা হয় তখন তাদের সরকারী হাসপাতালে গেলে কমই পাওয়া যায়,কারন সরকারী হাসপাতালে থাকলে আয়ের অংশ নির্দিষ্ট থেকে যায় কিন্তু প্রয়োজন যখন অনির্দিষ্টতার তবে সরকার

অনির্দিষ্টতার তবে সরকারীতে চাকুরীর পাশাপাশি বেসরকারি বানিজ্যে যোগে আয় কয়েকগুন বেড়ে যায় -বেসরকারিভাবে রোগী প্রতি হাজার কিংবা তারো অধিক করে নেওয়া যায় তাছাড়া ঔষুধ কোম্পানিদের দেওয়া মাসশেষের অংশ আর ডায়াগনস্টিক সেন্টার হতে প্রাপ্ত পার্সেন্টিজ সবমিলিয়ে আঙগুল ফুলে কলাগাছ দশা। এই ব্যাবস্থাকে চিকিৎসা সেবা বলা চলে না,বলা চলে স্বার্থ সেবা,ঔষুধ কোম্পানির সেবা আর বেসরকারি হাসপাতাল মালিকের সেবা।আরো উল্লেখ্য কিছু ঘটনা আছে যা না বললেই নয়,শরীয়তপুরে চিকিৎসকের ঘোষণামতে শিশু মাতৃগর্ভে মারা যায়, কর্তৃপক্ষ আল্ট্রাসনোগ্রাম করে নিশ্চিৎ হয়ে ঘোষণা দেয় পর যখন সন্তান সম্ভবা মাকে অস্ত্রপ্রচার করানো হয়,মৃত নয় এক জীবিত শিশু জন্ম দেন জননী!তারি কিছুদিন পর আরো একটি ঘটনা,চিকিৎসক নবজাতককে মৃত ঘোষণার ছয় ঘন্টা পর দাফনের সময় বেঁচে উঠে শিশু।এরকম আরো অনেক নেক্কারজনক ঘটনা ঘটছে চিকিৎসার নামে প্রতিনিয়ত, এসবের কিছু প্রযুক্তিবিদ্যার প্রসারতার ফলে প্রায়ই পত্রিকায় দেখতে পাই আবার এমনি অনেক সত্য চাপা পরে থাকে নিজস্ব ক্ষমতা বলে। আমরা আমাদের চিকিৎসা কে ফের সেবার মানসিকতায় পেতে চাই,চিকিৎসার মতো এমন গুরুত্ববহ পেশাটিকে যদি এভাবেই বানিজ্যিকীকরন করা হয় তবে আমাদের সমাজের চিকিৎসায় এক ভয়ানক,হৃদয়বিদারক পরিবর্তন আসবে আর সাধারন মানুষগুলো এর শিকার হয়ে চিরকাল ক্রমেক্রমে অবর্ননীয় দুর্দশায় ভুগতে থাকবে
সুবাস সরকার
শিক্ষক ও কবি গাজীপুর


No comments:

Post a Comment