![](https://blogger.googleusercontent.com/img/b/R29vZ2xl/AVvXsEgEK1bKvlqaF5LsJIUFacwHm8j3qDVfoUYHPd9BwrQlxsGL7H8CC78yNjeP8IDRbduG3xnUL97WBC4xth6-qNmErJo06EYeHRGCeAP6-qCW2KiBpGOSYp7O6EzHdsmFiBJN8xbin00GeRBv/s1600/Screenshot_17-2.png)
.
উঁফ, কেন যে এই হাফ ভাড়া দেওয়ার জন্য
বিআরটিসির রিক্সা গুলায় চড়ি, একে তো
পা রাখার যায়গা থাকে
না, তার ওপর কচ্ছপ গতি ! আজ বোধহয় আর
টিউশনিটাকে বাঁচাতে পারবো না,
তিনদিন পর যাচ্ছি, তবুও লেট করে..!
.
বাস থেকে নেমে পকেটে হাত দিলাম,
কিন্তু একি..! মোবাইলটাই তো নাই ! উঁফ,
চোরটার জন্য খুব মায়া হচ্ছে,
বেচারি এত কষ্ট করে চুরিটা করলো, কিন্তু
তেমন ফায়দা হবে না, মাত্র ৪০০ টাকা
দামের একটা চায়না
বাটনওয়ালা হ্যান্ডসেট, গত মাসের
টিউশনির টাকাটা দিয়ে বাসার নিচের
চায়ের দোকানের মামার কাছে
কিনেছিলাম । কিন্তু আফসোস, ফোনটার
চার্জিং
পিনটাও ভালো না, অটো চার্জার দিয়ে
চার্জ দিতে হয় ।
.
হাটতে হাটতে মেহজাবিন দের বাসার
নিচে চলে এসেছি । ঢুকবো কি ঢুকবো না
করতে করতেই গেইটে একটা
ধাক্কা দিলাম, একি! গেইট খোলা কেন?
আর দারওয়ান কই!?
.
ডানে-বামে তো কাউকেই দেখছি না,
সিড়ি দিয়ে উঠে সোজা দোতলায় চলে
আসলাম । কলিং বেল থাকা
সত্তেও আমি সব সময় দরজায় টোকা দেই,
একদম মৃদু টোকা..! এই আস্তে টোকা দেওয়ার
জন্যই একদিন আধ
ঘন্টা বাইরে দাড়িয়েছিলাম ।
.
আজকেও মনেহয় দাড়িয়ে থাকতে হবে ।
আবার টোকা দিতে যাবো, তখনই আন্টি
দরজা খুলে দিলেন । আমি
স্বভাব সুলোভ আর ভদ্রতার খাতিরে একটা
কৃত্রিম মিষ্টি
হাসি দিলাম । কিন্তু আন্টি আজকে কেমন
যেন গম্ভীর ।
.
-আন্টি ভালো আছেন?
-হ্যা নাহিন, তুমি ভালো আছো? আসলা না
কেন এই কয়দিন?
একসাথেই দুই প্রশ্নের উত্তর কিভাবে
দিবো এটাই ভাবছি, অবশেষে বলে
ফেললাম, -জ্বী আন্টি, জ্বর সেড়ে গেছে ।
-তোমার জ্বর এসেছিল বলোনি কেন? আর
ফোন অফ কেন ছিল কেন?
-আন্টি আমার ফোনে তো চার্জ থাকে না,
তাই ফোন অফ হয়ে যায় ।
-ফোনটা চেঞ্জ করো ।
-জ্বী আন্টি, আজকেই কিনবো !
(এবার তো বাধ্য হয়ে কিনতে হবে)
.
আন্টির সাথে কথা বলে সোজা কাব্যর রুমে
চলে গেলাম ।
.
ও হ্যা, আমার নাম নাহিন । সবে ইন্টার
পাশ করেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের এডমিশন
টেস্ট নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছি
না । কারণ আমি জানি, ওখানে পড়ার জন্য
আমার চেয়ে অনেক বড় মেধাবীরা
ইতিমধ্যে তোরজোড় শুরু করে
দিয়েছে । আমি আগে কখনও টিউশনি
করিনি, এটাই প্রথম, HSC পরীক্ষা দেওয়ার
পর শুরু করেছি । যদিও অনেক অর্থাকষ্টে
ভুগেছি, তবুও এদিকে আমার তেমন নেশা
ছিল
না । কাব্য, আমার ছাত্র, মেহজাবিনের
ভাই, ক্লাস ফোরে পড়ে, গড়পরতা অন্য দশটা
বাচ্চার মতই দুষ্ট, আর
ছাত্র হিসেবেও তেমন খারাপ না, এক অংক
দুবার বুঝিয়ে দিলেই পারে..!
.
যাইহোক, আমি কাব্যকে পড়াতে গেলাম, দু
মিনিটের মধ্যেই কাব্য চলে এলো ।
যথারিতি পড়ানো শুরু করার ৫
কি ৬ মিনিটের মধ্যেই চা বিস্কিট চলে
এলো ! আমি কখনও বিস্কিট খাইনা, ওটা
কাব্যকেই খাওয়াই । কিন্তু
বিপত্তিটা হলো, প্রতিবার আন্টি চা দিয়ে
যায়, কিন্তু আজকে হঠাৎ মেহজাবিন । যদিও
আজকে ওকে রুমে ঢোকার সময় দেখিনি । ওর
চোখ এত ফোলা ফোলা কেন, কান্না
করেছে নাকি...?
.
আচ্ছা, প্রথম দিন থেকেই বলি,
এক বড় ভাই এই টিউশনিটা আমাকে যোগাড়
করে দিয়েছিল । প্রথম দিন এসেই দোটানায়
পরে গিয়েছিলাম
যে, কাব্যরা কয়তলায় থাকে! এটা তো শুনে
আসিনি?! আর এদিকে আমার ফোন নষ্ট,
কারও ফোন নিয়ে যে বড়
ভাইকে ফোন দিবো সেটাও সম্ভব না, কারণ
নাম্বার আমার মুখস্ত না । আবার অন্য
কাউকে বলাও ঠিক হবে না
যে, "আমার SIM টা একটু আপনার ফোনে
তুলবেন?"
.
এদিকে সেদিনও দাড়োয়ান ছিল না, তাই
জিজ্ঞেস করার মত কাউকে না পেয়ে
অযথাই বসেছিলাম, যে কেউ
আসলে তাকে জিজ্ঞেস করবো । হঠাৎ একটা
মেয়ের আগমন,
.
-আপনি কবে থেকে জয়েন করলেন? (মেয়ে)
-জ্বী আজকেই প্রথম !
-কেন, আগের দাড়োয়ানকে না আজকে
সকালেই দেখলাম?
-মানেহ?! আমাকে কি আপনার দাড়োয়ান
মনে হয়?
-আজব তোহ, একটু আগেই না বললেন আজকে
জয়েন করেছেন? আর এখানে বসে আছেন
কেন, কে আপনি,
কাকে চাই?
(একনাগারে এতগুলো প্রশ্ন করে আমার
মাথাটা একদম
হ্যাং করে দিলো)
-আসলে আমি এখানে কাব্য নামের
একজনকে পড়াতে
এসেছি, কিন্তু ওরা কোন ফ্ল্যাটে থাকে
জানিনা !
-ওহ, তাই এখানে এই টুলের ওপর বসে
থাকবেন?
-আর তো বসার জায়গা নেই ।
-উফ, দোতলায় দুইশ তিন নম্বর ফ্ল্যাট ।
.
আর কথা না বলে সোজা সিড়ি ধরলাম,
কিন্তু মনে মনে বললাম একটা ধন্যবাদ
দেওয়া উচিৎ ছিল । নাহ, ওকে
কিসের ধন্যবাদ দিবো, আমাকে দাড়োয়ান
বলেছে, হুহ !
.
প্রথমদিন পড়ানোর শেষে তারপরের দিন,
.
আজকে পড়াতে গিয়ে দেখি ঐ মেয়েটা
দরজা খুলে দিল, আমাকে দেখেই মেয়েটা
মুখ লুকিয়ে কি হাসি, মুডটাই
খারাপ হয়ে গেল । দরজা খুলে দিয়েছে,
কিন্তু সরে দাড়ানোর নাম নেই ! তাই
অগত্যাই রুমে ঢোকার জন্য পা
বাড়ালাম !
.
রুমে ঢুকেই দেখি আন্টিও হাসছে আমাকে
দেখে,
.
-নাহিন তুমি কিছু মনে করোনিতো গতকাল,
মেহজাবিনের
ব্যবহারে? (আন্টি)
.
কি মেয়েরে বাবা, সবকিছু আন্টিকে বলে
দিয়েছে? ওর
দিকে তাকিয়ে দেখি এখনও হাসছে..!
আমার নিরবতা
দেখে আন্টি আবার বললেন,
.
-কিছু মনে করোনা, ও তোমাকে চিনতে
পারেনি ।
-নাহ আন্টি, কিছুই মনে করিনি !
সোজা কাব্যকে পড়াতে গেলাম ।
.
এভাবেই পড়াচ্ছিলাম । মেহেজাবিন মাঝে
মাঝে এসে
দেখতো, কেমন পড়াচ্ছি, আর আমার
ছাত্রকে আলগা
ঝাড়ি দিত ! যে কয়দিন পড়াতে গেছি,
প্রতিদিনই এসে আমার পড়ানোর বারোটা
বাজিয়ে দিতো !
.
এরমধ্যে একদিন যাইনি, তারপরের দিন না
আসার কারণ দর্শানোর পর, আন্টি আমার
ফোন নাম্বার নিল ! কিন্তু
আমি উনাদের নাম্বার নেইনি ! সেদিন
রাতে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন,
.
-হ্যালো (আমি)
-হুম, আমি মেহেজাবিন
-ও হ্যা, বলুন
-স্যরি
-কেন?
-আসলে সেইদিনের ঘটনাটার জন্য আপনাকে
স্যরি বলা হয় নি
-নাহ, আমি কিছু মনে করিনি, স্বাভাবিক
ভাবেই নিয়েছি ! কিছু বলবেন?
-হুম, নাহ (!) আর শুনুন, আমি আপনার ২ বছরের
জুনিয়র, সো
তুমি করে বলবেন প্লীজ..! বড়রা আপনি করে
বললে.....
.
ধুরর, শালার ফোনটা অফ হয়ে গেল !
.
যাইহোক, এভাবেই পড়াচ্ছিলাম ! মাঝে
মাঝে রাতে ও ফোন দিতো, যদিও আমি
কখনও দিতাম না ! হুম, তুমি করেই
বলতাম ! একদিন বলল ওর নাকি বার্থডে
আগামীকাল ! তাই ইনভাইট করলো ! কিন্তু
তারপরের দিন থেকে তিন দিন আমি
যাইনি ! তারপরেই আজকে গেলাম এবং এখন
চা
হাতে ও দাড়িয়ে আছে,
.
-কি হয়েছে কি আপনার? আপনি এলেন না
কেন এই কদিন?
জানেন, বার্থডে পার্টিতে আমি আপনাকে
কত মিস
করেছি?(মেহেজাবিন)
-স্যরি, আমার জ্বর হয়েছিল (যদিও জ্বর
হয়নি)
বাই দ্য ওয়ে, হ্যাপি বার্থডে !
-জ্বর হয়েছিল বুঝলাম, কিন্তু এর সাথে ফোন
বন্ধথাকার মানে কি? দেখিতো আপনার
ফোনটা? (অধিকার মিশ্রিত গলা)
-আমার ফোনটা চুরি হয়ে গেছে !
-তাহলে অন্য কারও দিয়েও তো একবার কথা
বলতে পারতেন?
-তোমার নাম্বার টা আমার মুখস্ত নেই, আর
ফোনটা আজকে হারিয়েছে !
-তাহলে ফোন অফছিল কেন, আর একটি বারও
ফোন দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলেন না?
.
কি উত্তর দিব ভাবতে ভাবতেই আন্টি চলে
এলো,
.
-নাহিন, তোমার এই মাসের টাকাটা ! আর
হ্যা, আগামী ৩ দিন তোমার আসতে হবে
না, আমরা গ্রামের বাড়ি যাবো, কাব্যর
দাদু খুব অসুস্থ !
-আচ্ছা আন্টি
.
সেদিন পড়ানো শেষ করে আসার সময়
মেহেজাবিন বলল,
.
-আপনি একটু নিচে দাড়াবেন, আমি আসছি..!
কড়ই গাছের
নিচে দাড়াবেন প্লীজ...
.
আমি মাথা দিয়ে হা সুচক স্বীকার করে
বের হলাম ।
.
নিচে নেমে একটু হেটে কড়ই তলায় এসে
দাড়ালাম ! একটু
পরই ও আসলো,
.
-একটা রিক্সা নিন
-কোথায় যাবা?
-রিক্সা নিতে বলেছি নিন
.
রিক্সা নিয়ে উঠে বসলাম, ও
রিক্সাওয়ালাকে বলল কাছের যে কোনো
একটা ফাঁকা জায়গায় নামিয়ে দিতে ।
রিক্সাওয়ালাও ঝোঁপ বুঝে কোঁপ মেরে
একটা পার্কে নামিয়ে দিল । রিক্সা
ভাড়টা মেহেজাবিনই দিল । একটু
হাটার পর একটা বেঞ্চে ও বসতে বলল..!
.
-আপনি জানেন, কেন আমরা গ্রামের বাড়ি
যাচ্ছি?
-হুম, তোমার দাদু অসুস্থ!
-ওটা মিথ্যা কথা, গত জন্মদিনের পার্টিতে
আপনার না
আসার জন্য খুব অসস্থিবোধ হচ্ছিল, আম্মু
এটা বুঝে যায়,
তাই আম্মু আমাকে জিজ্ঞেস করার পর
আমি বলে দিয়েছি, আমি আপনাকে
ভালবাসি..আম্মু আব্বুকে বলে
দিয়েছে এই কথা, তাই গ্রামের বাড়ি
আমাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে পাত্র
দেখানোর জন্য..! আম্মু আব্বুকে বলে
ব্যপারটা এমন ভাবে হ্যান্ডেল করেছে,
যাতে আমি কিছু না টের পাই, কিন্তু আমি
লুকিয়ে সবকিছু শুনে ফেলেছি।
(মেহেজাবিন)
-.......
-কিছু বলছেন না কেন? কি ভেবেছেন কি,
আপনি কিছুই বোঝেন না? সব ভালবাসা কি
মুখ দিয়ে বলতে হয়? তুমি করে বললাম, তাই
কি ভালবাসা হয়ে গেল? ভেবেছেন আপনি
না বোঝার
ভান করবেন, আর আমি ওটা মেনে নিবো!?
(মেহেজাবিন)
-....!
-কিছু বলছেন না কেন আপনি?
-কি বলবো?
-আপনার কি কিছুই বলার নাই?
-না
-আমার চোঁখের দিকে তাকান, এইযে,
আপনাকে তাকাতে বলছি, হ্যা তাকিয়ে
থাকেন ! এবার বলুন তো, আমাকে
আপনি ভালবাসেন কিনা?!
-তুমি এবার কোন ক্লাসে?
-ইন্টার ফার্স্ট ইয়ার
-আবেগ বোঝো?
-দরকার নেই
-তুমি যে এখন ভালবাসার কথা বলছো, ওটা
আবেগ বৈকি অন্য কিছুনা !
-আমি এগুলা শুনতে চাইনা, আপনি আমাকে
বিয়ে করবেন, এবং আজকেই !
-এটা সম্ভব না, আমি বিয়ে করে এখন
তোমাকে কোথায় রাখবো? আর আমি
নিজেও এখনও তেমন বড় হইনি, নিজেই চলতে
পারি না ! আব্বু মারা গেছে, মামারা
চালাচ্ছে আমাকে !
-আমি এত কিছু বুঝি না, আমাকে বিয়ে
করবেন, ব্যস
-আবেগে বিয়ে করা যায়, সংসার না
-আমাকে শোনাচ্ছেন কেন এগুলা?! আমি
এগুলা শুনবো না এখন..!
-আচ্ছা, তুমি এখন বাসায় যাও, আমি তোমার
সাথে পরে দেখা করছি, একটু ভাবতে দাও
আমাকে..!
-কোনো ভাবা ভাবি নাই, আমাকে আজকে
এক্ষুণি বিয়ে করতে হবে..!
-আচ্ছা, আজকেই করবো..! তোমার সাথে
সন্ধ্যায় দেখা করছি, এখন বাসায় যাও..!
-আচ্ছা, আমি বাসায় গিয়ে সব গুছাচ্ছি, যা
করার আজকেই করবেন, কালকে কিন্তু আমরা
চলে যাবো..!
-আচ্ছা যাও এখন
-সন্ধ্যায় কোথায় দেখা করবো?
-কড়ই তলা
.
চলে যাচ্ছে ও, পিছন থেকে একটু ডাক
দিলাম ! দেখলাম একটু ভালভাবে, একটা
মুচকি হাসি দিয়ে বলল,
.
-সন্ধ্যায় আসছি, তুমিও একদম রেডি হয়ে চলে
আসবা কিন্তু..! স্যরি, চলে আসবেন..!
.
আস্তে আস্তে চলে আসলাম, বাসার নিচের
চায়ের দোকানদার কে ৫০০ টাকা দিলাম !
আরও একটা ফোন
চাইলাম, বললেন পাইলে রেখে দিবেন
আমার জন্য !
বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হলাম, একটু পর বের হয়ে
সেই টিউশনি যোগার করে দেওয়া বড়
ভাইয়ের কাছে গেলাম, বললাম
.
-ভাইয়া, নতুন একটা টিউশনি যোগার করে
দেন, নতুন গন্তব্যের প্রয়োজন ।
.
বড় ভাই বুঝলো কিনা, না বুঝলো, শুধু হা করে
তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে..!
.
Writter :- Tarique Us Zaman Antar
No comments:
Post a Comment